সুন্দরবনকে চাঁদপাই রেঞ্জ , শরণখোলা রেঞ্জ , খুলনা রেঞ্জ এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ সহ মোট চার টা রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। চাঁদপাই এবং শরণখোলা রেঞ্জ বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত , খুলনা রেঞ্জ খুলনা জেলার অন্তর্গত এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সদর দপ্তর সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর গ্রামে অবস্থিত। আর এই বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর গ্রামে আমার বাড়ি। সুন্দরবনে খলিশা, গরান , বাইন , গেওয়া , কেওড়া , কাকড়া , গর্জন , পশুর প্রভৃতি গাছ আছে। মৌমাছি যে গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তাকে ওই গাছের মধু বলা হয়। কিন্তু সবাই সুন্দরবনের সব মধুকে খলিশা ফুলের মধু বলে চালিয়ে দেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সুন্দরবনের সব মধুই খলিশা ফুলের মধু নয়। আসুন জেনে নেই সুন্দরবনে আসলে কয় রকম ফুলের মধু পাওয়া যায়।
বছর এর প্রথম দিকে অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিল মাসে সুন্দরবনের খলিশা গাছে প্রচুর ফুল ফোটে , এই সময়টাতে সুন্দরবনে অন্য কোনো গাছে ফুল ফোটে না। সুতরং এই সময়ে যে মধু সংগ্রহ করা হয় সেটাই হলো একক খলিশা ফুলের মধু।
তাহলে আমরা বলতে পারি ফার্স্ট ট্রিপে অর্থাৎ মার্চ মাসের ২০ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত এই এক মাস সময় কালে সংগ্রহ করা মধুই হলো সুন্দরবনের বিখ্যাত খলিশা ফুলের মধু। গুনে ও মানে এই মধু সবার থেকে সেরা। এজন্য খলিশার মধুর দাম ও একটু বেশি।
এরপর সেকেন্ড ট্রিপে অর্থাৎ এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ থেকে মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত যে মধু সংগ্রহ করা হয় সেটা মূলত সুন্দবনের গরানের মধু। গরানের মধু দেখতে কিছুটা লালচে হয়। তবে সেকেন্ড ট্রিপের সময় সুন্দরবনে খলিশা গাছে তখনও কিছু ফুল থাকতে পারে। এই সময় খলিশা ফুলের মধুর সাথে গরান ফুলের মধু মিশ্ৰিত হয়ে মিক্স খলিশা মধু হয়। মিক্স খলিশা মধু এমন মধু না সেটা পিওর একক খলিশা ফুলের মধু, না সেটা পিওর একক গরান ফুলের লালাচে মধু। তাহলে আমরা বলতে পারি সেকেন্ড ট্রিপে মূলত গরানের মধু পাওয়া যায় , তবে খুব অল্প পরিমানে হলেও মিশ্র খলিশা মধু ও পাওয়া যেতে পারে।
মৌসুমের একবারে শেষের দিকে অর্থাৎ লাস্ট ট্রিপে মে মাসের ২০ তারিখ থেকে জুন মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত এই সময় সুন্দরবনে সব গাছেই ফুল ফোটে , সুতরাং লাস্ট ট্রিপে যে মধু সংগ্রহ করা হয় তা হলো গেওয়া , বাইন ও কেওড়ার মধু। কেউ কেউ এ সময়ের মধুকে মিশ্র ফুলের মধু ও বলে থাকেন। তবে একটা জিনিস জেনে রাখা ভালো সেটা হলো লাস্ট ট্রিপে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। এ সময় সুন্দরবনে প্রচুর পরিমানে কেওড়ার ফুল ফোটে, সেজন্য এসময় একক কেওড়ার মধু ও পাওয়া যায় , আর এই কেওড়ার মধু দেখতে অনেকটা খলিশা ফুলের মধুর মত লাগে। কিন্তু দেখতে এক রকম হলেও কেওড়ার মধু খেতে হালকা টক লাগে।
পরিশেষে একটা কথা বলে শেষ করতে চাই , সেটা হলো সুন্দরবনের সব ফুলের মধুই খাঁটি মধু। আমরা শুধু খলিশা ফুলের মধুই খাবো না। সাথে সাথে আমরা গরান ফুলের মধু এবং অন্য সকল ফুলের মধুই খাবো।
–
মোঃ আহসান হাবীব
ফাউন্ডার , নীলডুমুর ডট কম